এছাড়া উর্দু, আরবী ও ফার্সী ভাষায় 'উর্দূ ব্যাকরণ' 'রেয়াজুল নুর' 'গোল দস্তে আকাঈদ' নামের বিভিন্ন গ্রন্থ সহ পীর আউলিয়াদের জীবনি ইত্যাদি লিখিত বহু গ্রন্থ সিলেটের প্রাচীন সাহিত্যের স্বাক্ষর হয়ে সংরক্ষিত হচ্ছে বাংলা লোকসাহিত্যে । সিলেট অঞ্চলে রচিত ইসলামি গ্রন্থ (কিতাব) সহ পই-পুঁথি, গজল-কবিতা, ডাক-ডিঠান, ধাঁধাঁ-ছিলক, জারী-সারী ইত্যাদিকে অঞ্চলিক লোকঐতিহ্য বলে ধরা হয় ।
১৩০০ খ্রিস্টাব্দের গুড়াথেকে পীর আউলিয়ার আনিত সংস্কৃত ইসলামীক মতবাদ যখন সিলেট অঞ্চল প্লাভিত করে ছিল, তখন থেকে সাধক ফকিরদের চেষ্টা-প্রচেষ্টায় মানুষকে শিক্ষা দেয়ার মাধ্যম হিসেবে লোকসাহিত্যের ব্যবহার ধীরে ধীরে পীর আউলিয়ার সাধনাগার (খানকায়) প্রতিষ্টা লাভ করে । আঞ্চলিক লোকসাহিত্য ইসলাম দ্বারা প্রবাম্ভিত হয়ে খ্যাত হয় মুর্শিদি\ফকিরালী গান বা মরমী সঙ্গীত নামে । খোদা প্রেমিক লোকমানুষ প্রেম পিপাসায় দগ্ধ হয়ে সুর মুর্ছনায় মাধ্যমে যে ভাবের কথা ব্যক্ত করে, ইহাই মরমী সঙ্গীত । আধ্যাত্মিক সুর মুর্ছনার কাফেলায় সিলেটের অবস্থান প্রথম কাতারে। কারণ হচ্ছে হাজার হাজার আউলিয়ার সংস্রব পেয়ে এ অঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে ভাব দেশের বাসিন্দায় পরিণত ।
বাউল সাধনা ও মরমী বাদের মিশ্রণ
মরমী কবিরা তাসাউফপন্থী। মরমীবাদ ও সূফীতত্ত্ব সাধারণত মুর্শিদ প্রদর্শিত তরিকার নামে পরিচিত। এশক্, মহববত বা আল্লাহ প্রেমই মরমী সঙ্গীতের বিষয়বস্তু । পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্যের ভেদবিধি নিয়েই মরমী কবিরা সঙ্গীত রচনা করেন। সিলেটের প্রায় সব মরমী কবিগণ চিশতীয়া তরিকার অনুসারী। হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (র.) (১১৪২-১২৩৬) দ্বাদশ শতাব্দিতে ভারত উপমহাদেশে আজমির শরীফে এ তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম সূফী সাধকদের ইসলামের বাণী নিয়ে এ দেশে আগমনকাল থেকেই ‘মরমী বা ছামা সঙ্গীতের' প্রচলন হয়। তাই সুলতানী আমলে মরমীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে বলে গবেষকদের ধারণা । মরমীবাদের বিকাশের শুরু থেকেই মরমী ভাবধারা জনমনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে এবং এই ভাবধারাই অকৃত্রিম সহজাত ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। সৈয়দ মোস্তফা কামালের মতে পরবর্তিতে (আনুমানিক ১৬৫০খ্রিঃ) চৈতন্যবাদ ও জগন্মোহনী ভাবধারার সংমিশ্রণে বাউল মতবাদের জন্ম হওয়ায় বৈঞ্চব পদাবলীতে মরমীবাদ সাহিত্যের প্রভাব পড়ে। বৈঞ্চব পদাবলীর পুর্বরাগ, অনুরাগ, বংশী, বিরহ, সম্মিলন ইত্যাদি শব্দ নামে উপনামে সূফীবাদ থেকে সরাসরি গ্রহন করা হয়। এভাবে সূফীবাদকে বৈঞ্চব্বাদে সংযুক্ত করে একটা ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে বলে গবেষকগণ অনুমাণ করেন । জগমোহন গোসাঈ বাউল সম্প্রদায়ের প্রবর্তক। তাকে আদি বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক হিসেবেও গণ্য করা হয়। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মাছুলিয়া গ্রামে তার আখড়া বিদ্যমান। জগন্মোহিনী সম্প্রদায়ের জপতপের মূলমন্ত্র ‘গুরু সত্য'। জগমোহন গোসাইর এক প্রশিষ্যের নাম রামকৃষ্ণ গোসাঈ। বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গলে তার প্রধান আখড়া রয়েছে। এ আখড়ার অধীনে প্রায় চারশ' ছোট বড় শাখা আখড়াও আছে। হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে এ সম্প্রদায়ের অনেক বাউল-বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী ছিল ও আছে। রামকৃষ্ণ গোসাঈর বারো জন শিষ্যের নামে বারোটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার ফরিদাবাদেও এ সম্প্রদায়ের একটি বড় আখড়া আছে। এরা কোন ধরনের জাতপাতের ধার ধারে না। আজকাল এদের প্রভাবে এক শ্রেণীর মুসলমান বাউলদের মাঝে ঢুকে হালাল-হারাম আছ্-বাচে বিশ্বাষ রাখে না । ফলে সুফিদের প্রবর্তিত মরমী সাধনা থেকে সরে গেছে দূরে । বাউল সাধনা ও মরমী সাধনার মধ্যকার ফারাকটুকু অনুমান না করাই হচ্ছে এর বিশেষ কারন। মরমী সাধকরা সব সময় ধর্ম শিক্ষার অনুকূলে সাহিত্য রচনা করেছেন । যদিও বিভিন্ন বিষয়ের মত প্রকাশে বাউলদের বঞ্চব সাহিত্য ধারার ব্যবহার করেছেনা। সাধনা ও চেতনার ক্ষেত্রে তারা ছিলেন ইসলামের অনুসারী। নবী করিম (সাঃ) এর নির্দেশিত পথে আত্মশুদ্বি করে ইসলামের বাহ্য ও অন্তর জীবনের প্রেমপূর্ণ বাস্তব অনুশীলনেরমাধ্যমে পরম সত্তার পূর্ণ জ্ঞানার্জন ও তার নৈকট্য লাভ মরমীদের লক্ষ । এথেকে বিচ্যুত হওয়াটাই দুঃখ জনক। সূফী সাধক ও মরমী কবি সৈয়দ জহুরুল হুসেন (র.) (১৮৭৬-১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ মধুপুর-বাহুবল-হবিগঞ্জ) এদের বে-শরা কাজ কারবারের বর্ণনা করেছেন এভাবে :
কি হৈল আখেরী কালে
ঝুটা পীরে শিক্ষা দিল গান-বাজনা জিকিরের তালে
নামাজ রোজার নাই লেশ, গান বাজনা জিকিরে বেশ
অঙ্গে ঘটায় আজব বেশ, লুণ্ঠন করে হাতের তালে
নামাজ রোজা নাই করিল, দলিল মতে কাফির হৈল
ঈমান আমান সব হারিল ঝুটা পীরের ঠেকে জালে
বালক পীর কাম বেপারী, ছুটে আসে কত নারী
একে অন্যে মাশুকদারী, গোল ঘটায় সব এক মফিলে
পীর বলে নাই আপন পর, আসা-যাওয়া কর বিস্তর
অপর নারী মাশুক ধর, মত্ত হয় সব বালক দলে
‘নাউজ্জুবিল্লাহ' এই তরিকায়, শয়তান তথায় শীঘ্র যায়
দলে দলে নরকে যায়, বড় পীর লিখেন দলিলে
জহুর বলে ব্যক্ত কথা, মনে কেহ না পাও ব্যথা
খাজা মঈনুদ্দীনের বার্তা ‘মক্তুবাতে' এসব মিলে।
মধ্যযুগের সিলেটি মরমী কবিরা
বাংলাদেশে ইসলাম রাজকীয় রূপ নিয়ে আসেনি। পীর ফকির ও সুফী সাধকেরাই এ দেশে মুলত ইসলাম প্রচার করেছেন । ইসলাম ধর্মের প্রধান লক্ষ্য মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি। এ লক্ষকে সামনে রেখেই সুফীবাদের যাত্রা। ইসলাম অনুমোদিত দুটি পথ শরীয়ত-মারিফত। এ দুইয়ের যোগফলকে সংক্ষেপে বলা হয় তাসাউফ । তাসাউফের মাধমে মানুষ আল্লাহর তা'য়ালার নৈকট্য লাভ করতে পারে। ইসলামি দৃষ্টিতে 'আধ্যাতিকতা' আত্মার পরিশুদ্ধি বুঝায়। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেনঃ মানবদেহে এক খণ্ড মাংস রয়েছে, সেটি শুদ্ধ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে। আর তা হলো আত্মা বা হৃদয় । হৃদয় বা আত্মাকে সুস্থ রাখার একমাত্র পথ হলো আল্লাহর যিকির করা। আল্লাহ পাক তাঁর পবিত্র কালামে বলেছেন; 'আলা বি-যিককরিল্লাহি তাতমা ই'নুল ক্বুলুব' অর্থঃ- আল্লাহর যিকিরে ক্বলবে শান্তী আসে। এই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ন রূপে আল্লাহ'তে নিমগ্ন হওয়াটাই ইসলামি মতানুসারে মানব জীবনের সার্তকতা । ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী আত্মার শুদ্ধি অবলম্বনের পথ পরিক্রমা বা পরিভ্রমনকে তরিকত বুঝায় । মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের পূর্বে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ধন্যছিল।
তখন মানুষ রূহ জগতের বাসিন্ধা ছিল । সেই জগত থেকে পরিভ্রমণের মাধমে আলমে মালাকুত হয়ে আলমে নাছুতে স্থানান্তর হয়। সেখান থেকে আসে দুনিয়ায়। যাকে বলা হয় আলমে জবরুত । আলমে জবরুত হচ্ছে মানুষের কর্মস্থল। বাহ্যিক ভাবে শরীয়তের ইবাদতের অনুশীলন করে বিশেষ কর্মপদ্ধতি 'তরিকত' অনুযায়ী অভ্যন্তরীন বা আধ্যাত্মিক আলোক দ্বারা সুসম্পন্ন হতে হয়। আর এতেই মিলে আল্লাহর সন্তুষ্টি। সূফী সাধনায় মারিফাত অন্যতম। তবে ইলমে তাসাউফের মর্মমূল হচ্ছে শরীয়ত। মধ্যযুগের মরমী কবিরা ছিলেন ভাবুক সচেতন। তাদের রচনায় রয়েছে ভাব, বিরহ ও আল্লাহর সাথে মিলনের আশা । সুফী শ্রেষ্ট মাওলানা রুমি (রহঃ) তার বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থে আল্লাহর মিলন সম্পর্কে বলেন;
বাঁশী যখন বাঁযে শোন দিয়া মন
প্রাণ বন্ধুয়ার লাগি বাঁশি কৰিছে ক্রন্দন।
ইসলামের বাণী নিয়ে সিলেটে আগত সুফী সাধকরা ইসালামিক আদর্শ ছড়িয়ে এদেশের মানুষকে করেছেন ভাবদেশের বাসিন্ধা। যার ফলে এখানে জন্মেছেন অসংখ ভাবুক কবি সাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যে যাদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবদান ।
বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদেও রয়েছে সিলেট অঞ্চলের মানুষের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। সিলেটের উচু নীচু পাহাড় টিলা, সবুজ-শ্যামল মাঠ, নদনদীর অবাধ গতিধারার সাথে একীভূত হয়ে এ অঞ্চলের জারি, সারি, ভাটিয়ালী, পালা, মেয়েলী গান, মরমীগান, কীর্তন-সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে।
কবিদের গীতি থেকেই কালক্রমে বয়ে চলেছে বৈষ্ণব সহজিয়া গান, বৈষ্ণব ও শাক্ত পদাবলি, আউল-বাউল-মারফতি-মুর্শিদি গানের প্রবাহ। এগুলির অন্তর্নিহিত গূঢ়ার্থ বাহ্য স্থূলার্থ থেকে স্বতন্ত্র। প্রচলিত স্থূলার্থের আবরণে ধর্মসাধনার এবং জগৎ-জীবনভাবনার নিগূঢ় সংকেত নির্দেশ করাই মরমীবাদের উদ্দেশ্য। পূর্বে বলা হয়েছে, সূফী সাধনায় মারিফাত অন্যতম। তবে ইলমে তাসাউফের মর্মমূল হচ্ছে শরীয়ত। মধ্যযুগের মরমী কবিরা ছিলেন ভাবুক সচেতন। তাদের রচনায় রয়েছে ভাব, বিরহ ও আল্লাহর সাথে মিলনের আশা । মৌলভীবাজার জেলায় কুলাউরা উপজেলার ঘরগাও গ্রামে মতান্তরে জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে জন্ম মরমী কবি শাহনুর (জন্মঃ ১৭৩০- মৃত্যু ১৮৫৪) প্রেম বিরহে বন্ধু পাওয়ার আশায় লিখেনঃ
বন্ধু তর লাইগা-রে আমার তনু জর জর
মনে লয় ছাড়িয়া যাইতাম, থইয়া বাড়ি ঘর
অরণ্য জঙ্গলার মাঝে আমার ভাঙ্গা ঘর
ভাইও নাই বান্ধবও নাই কে লইবে খবর
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর গতানুগতিক পরিসীমায় রোমান্টিকপ্রণয় কাব্যধারা প্রবর্তনকারী হিসাবে মুসলমান কবিগণের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। এ সময়ে আরবী, ফার্সী, ও হিন্দি সাহিত্যের বিষয়বস্তু ও ভাববৈচিত্র্য অবলম্বনে বাংলা ভাষায় কাব্য রচনায় এক নবযুগ সৃষ্টি করেন মহাকবি উপাদি খ্যাত সৈয়দ সুলতান (জন্ম আনুঃ ১৫৫০-মৃত্যু ১৬৪৮, লস্করপুর হবীগঞ্জ জেলা)। তিনি স্বধর্মে রক্ষণশীল, জ্ঞানী-গুণী-বিচক্ষণ ও দূরদর্শী কবি ছিলেন । এপর্যায়ের কবিগণের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বিচারে মহাকবি সৈয়দ সুলতানকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয় ।
যুগ-কাল পরিবর্তনে বাংলায় অনূদিত রামায়ণ মহাভারত এবং দীন ভবানন্দের লেখা বাংলা ‘হবিবংশ’ সিলেটের মুসলমানদের মধ্যেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল । সে জন্যেই সিলেটের যে সব মুসলমানেরা বাংলা লিপি পড়তে অজ্ঞ ছিলেন তাদের সাহিত্যিক রস পিপাসা নিবারণের কারণে সৈয়দ সুলতান ‘নবীবংশ’ লিখতে উৎসাহিত হয়েছিলেন । প্রায় পঁচিশ হাজার পংক্তিতে রচিত এ কাব্যে ‘হামদ’ অর্থাৎ আল্লাহ পাকের গুণকীর্তনের মধ্য দিয়ে কবি তাঁর মহাকাব্যের পর্দা উন্মোচন করেছেন । গ্রন্থের প্রথম চারটে পংক্তি এই-
প্রথমে প্রণমি প্রভু অনাদি নিধান
নিমিষে সৃজিছে যেই এ চৌদ্দ ভুবন ৷
আদি অন্ত নাহি তার নাহি স্থান স্থিত ৷
খন্ডন বর্জিত রূপ সর্বত্রে ব্যাপিত ।
ইসলামের শাশ্বত বাণী গানে ও লিখার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেয়া ছিল সিলেটের সুফী সাধকদের জীবনের লক্ষ্য। দুনিয়ার লাভ লোভ মোহ মায়ার ঊর্ধে জীবনযাপন করাই ছিল তাঁর জীবনাদর্শের অন্যতম। ফকির শিতা লং শাহ (জন্ম; ১৮০৬-মৃত্য ১৮৯৯) একজন খ্যাতনামা মরমী সাধক কবি ও সাহিত্যিক। তাওহিদ, রিসালত, আখেরাত ও মানব জীবনের ভেদ রহস্য উদঘাটন হচ্ছে তাঁর গানের মূল বিষয়বস্ত।
শিতালং ফকিরে বলে - ও মুমিন বৃথা আইলায় দুনিয়ায়
আল্লাহ আল্লাহ বল ভাই-রে - তরাইবানে ইল্লাল্লায়।
অতপর অধুনা যুগে এসে মরমী কবি দেওয়ান হাছন রাজায় লিখেন;
বিকাইলেনি ঐ বন্ধে কিনে গো সজনী সই, বিকাইলেনী ঐ বন্ধে কিনে
ছাইড়া থাকতে পারবনা গো কি হইল মোর মনে - গো সজনী সই
তার লাগিয়া প্রাণে আমার দৈর্য নাহি মানে
কি জানি কি কৈলগো মোরে মন-মোহনে
তার সম কেহ নাই এই ত্রিভূবনে
তার মত নাহি দেখি ধিয়ানে গিয়ানে।
মরমী সাধনা বাংলাদেশে দর্শনচেতনার সাথে সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছে সিলেটের সুনাম খ্যাত মহা সাধক হাছন রাজা (জন্ম ১৮৫৪-মৃত্য ১৯২২) দর্শনচেতনার নিরিখে লালনের পর যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নামটি আসে, তা হাছন রাজার। হাছন রাজার চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় তার গানে। তিনি কতো গান রচনা করেছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। 'হাছন উদাস' গ্রন্থে তার ২০৬ টি গান সংকলিত হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু গান 'হাছন রাজার তিনপুরুষ' এবং 'আল ইসলাহ্' সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শোনা যায়, হাছন রাজার উত্তরপুরুষের কাছে তাঁর গানের পান্ডুলিপি আছে। অনুমান করা চলে, তাঁর অনেক গান এখনো সিলেট-সুনামগঞ্জের লোকের মুখে মুখে আছে, কালের নিয়মে বেশ কিছু গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পদ্যছন্দে রচিত হাছনের অপর গ্রন্থ 'সৌখিন বাহার'-এর আলোচ্য বিষয়-'স্ত্রীলোক, ঘোড়া ও কুড়া পাখির আকৃতি দেখে প্রকৃতি বিচার(লোকসাহিত্য পত্রিকা, জুলাই-ডিসেম্বর ১৯৭৯। সৈয়দ মুর্তাজা আলী,'মরমী কবি হাসন রাজা')। 'হাছন বাহার' নামে তাঁর আর একটি গ্রন্থ কিছুকাল পূর্বে আবিস্কৃত হয়েছে। হাছন রাজার আর কিছু হিন্দী গানেরও সন্ধান পাওয়া যায়।
মরমী গানের ছক-বাঁধা বিষয় ধারাকে অনুসরণ করেই হাছনের গান রচিত। ঈশ্বরানুরক্তি, জগৎ জীবনের অনিত্যতা ও প্রমোদমত্ত মানুষের সাধন-ভজনে অক্ষমতার খেদোক্তিই তাঁর গানে প্রধানত প্রতিফলিত হয়েছে। কোথাও নিজেকে দীনহীন বিবেচনা করেছেন, আবার তিনি যে অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকের হাতে বাঁধা ঘুড়ি সে কথাও ব্যক্ত হয়েছেঃ
| গুড্ডি উড়াইল মোরে,মৌলার হাতের ডুরি।
হাছন রাজারে যেমনে ফিরায়, তেমনে দিয়া ফিরি।
মৌলার হাতে আছে ডুরি, আমি তাতে বান্ধা।
জযেমনে ফিরায়, তেমনি ফিরি, এমনি ডুরির ফান্ধা।
|
|
এই যে 'মৌলা' তিনিই আবার হাছন রাজার বন্ধু। স্পর্শের অনুভবের যোগ্য কেবল, তাঁর সাক্ষাৎ মেলে শুধুমাত্র তৃতীয় নয়নেঃ
| আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে।
আরে দিলের চক্ষে চাহিয়া দেখ বন্ধুয়ার স্বরূপ রে। |
|
কিন্তু এই বন্ধুর সনে হাসন রাজার প্রেমের আশা বাঁধা পেত স্বজন ও সংসার। হাছনের খেদঃ
| স্ত্রী হইল পায়ের বেড়ি পুত্র হইল খিল।
কেমনে করিবে হাসন বন্ধের সনে মিল। |
|
এদিকে নশ্বর জীবনের সীমাবদ্ব আয়ু শেষ হয়ে আসে- তবু 'মরণ কথা স্মরণ হইল না, হাছন রাজা তোর'। পার্থিব সম্পদ, আকাঙ্ক্ষা আর সম্ভোগের মোহ হাছন রাজাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আবার নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারেনঃ
যমের দূতে আসিয়া তোমার হাতে দিবে দড়ি
টানিয়া টানিয়া লইয়া যাবে যমেরও পুরিরে
সে সময় কোথায় রইব (তোমার) সুন্দর সুন্দর স্ত্রী
কোথায় রইব রামপাশা কোথায় লক্ষণছিরি রে
করবায় নিরে হাছন রাজা রামপাশায় জমিদারী
করবায় নিরে কাপনা নদীর তীরে ঘুরাঘুরি রে
(আর) যাইবায় নিরে হাছন রাজা রাজাগঞ্জ দিয়া
করবায় নিরে হাছন রাজা দেশে দেশে বিয়া রে
ছাড় ছাড় হাছন রাজা এ ভবের আশা
প্রাণ বন্ধের চরণ তলে কর গিয়া বাসা রে।
মরমী সঙ্গীতকে ভাবুকদের মনের অনুরাগের ফসল বলা হয়। মরমী কবি তার হৃদয়ের বাসনা আপন সৃষ্টির মাঝে ফুঁটিয়ে তুলেন কিন্তু সেখানে প্রতিবিম্ব হয় দেশ, কাল, প্রাত্রের মনের কথায়। সিলেটের মরমী সাহিত্যের অব্যাহত ধারায় আরেক মহাত্মা কবি 'আরকুম শাহ' (১৮৭৭-১৯৪১) সিলেট গীতি সাহিত্যেঃ আরকুম শাহ'র জনপ্রিয় একটি গানঃ
সোনার পিঞ্জিরা আমার কইরা গেলায় খালিরে
হায়-রে আমার যতনের পাখি
সুয়ারে, একবার পিঞ্জিরায় আও দেখি
আজ্ঞা মতে এই দেহাতে কইলা পরবাস
এখন কেন যাও ছাড়িয়া করিয়া নৈরাশ -রে।
মরমী মতবাদে মূলত প্রেম বা মহব্বতের প্রাধান্যই বেশি। মরমীবাদ সম্পর্কে ইমাম শামি (রহঃ) বলেন; হৃদয়ের অনুভূতির মাধ্যম আধ্যাত্মিক জ্ঞান অজর্ন এর মূল লক্ষ্য। যা হবে সৎ গুন অর্জন এবং অসৎ গুন বর্জনে। ইহাই হচ্ছে পরম সত্তা আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞানার্জন ও তার নৈকট্য লাভের রহস্যময় উপলব্ধিক । স্রষ্টা ও সৃষ্টির কিছু কিছু রহস্য বুঝতে হয় প্রেমের মাধ্যম হৃদয় দিয়ে । স্রষ্টার উপস্থিতি শুধু হৃদয়ের অনুভুতিতেই উপলব্ধ । হাছন রাজা এ বিষয়ে লিখেছেন ;
অন্য পন্থে নাহি গিয়া প্রেম পন্থে গেলে
মিলিবে মিলবে খোদা হাছন রাজায় বলে ।
সিলেটে মরমী সঙ্গীতে প্রেম বিরহ ছাড়া সৃষ্টি তত্ব, ভাব তত্ব, ধর্ম দর্শন, মানব কল্যাণ সহ বিভিন্ন ভাব ধারার রচিত বলে গবেষকদের লিখায় পাওয়া যায়। দৃষ্টান্ত স্বরুপ মরমী গবেষক মধ্যযুগের কবি তাজ উদ্দীন মোহাম্মদের একটি কবিতা, যা সৃষ্টি তত্বের উপর কবি লিখেছেন
আপনার কুদরত আগে করিতে জাহের
নিজ নুরে আমার নুর পয়দা কৈলেন ফের
আমার নুরেতে পয়দা তামাম জাহান
আরশ, কুরশী, লওহ কলম ও লা-মাকান
কবি তাজ উদ্দীনের কবিতার সারাংশ পাওয়া যায়, মধ্যযুগের কবি আলাওলের এ কবিতা থেকেঃ
পূর্বেতে আছিলা প্রভূ নৈরূপ আকার
ইচ্ছিলেক নিজ সখা করিতে প্রচার
নিজ সখা মোহাম্মদ প্রথমে সৃজিলা
সেই জ্যোতি নুরে ত্রিভূবন নির্মীলা
আধ্যাত্মিক গান ভাববাদী মানুষকে আধ্যাতিক জগতের সন্ধান দিতে সহায়ক তাই সৈয়দ শাহনুর লিখেন;
অজুদে মজুদ আছে লীলার কারখানা
সৈয়দ শাহনুরে কইন দেখলে তনু ফানা।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সিলেটের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্য ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে । উপমহাদেশীয় মানচিত্রে আদিকাল হতেই সিলেটভূমির কায়িক অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট । হযরত শাহজালাল (র.)-এবং তাঁর সঙ্গী ৩৬০ জন সাধকপুরুষের প্রভাবে সিলেট অঞ্চলে এক প্রাণবন্ত তওহীদী ভাবমণ্ডলের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল যা বাংলাদেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে দক্ষিণপূর্ব ও দূরপ্রাচ্য পর্যন্ত প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল । মধ্যযুগ সিলেটের সূফী সাধকগণের গীতি-কবিতা চর্চার সাফল্যের যুগ । এ যুগই ছিল বাংলা সাহিত্যের সোনালী যুগ । এ সময়ে আরাকানে বাঙালি মুসলিম চিৎপ্রকর্ষের উজ্জ্বল বিকাশ ঘটে। বাংলার রাজধানী গৌড় সহ নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহে নিঃসন্দেহে মুসলিম বাঙালি সভ্যতার সৌধ নির্মিত হতে থাকে এবং মুসলিম দরবারী পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক বিকাশ পর্যায়ের সূচনা হয় । মুসলমান কবিগণ আপন আধ্যাত্মিক অভীপ্সা চরিতার্থের প্রয়াসে আধ্যাত্মিক সঙ্গীত-জগত নির্মাণ করে ইসলামী ইতিহাসের আবহমান সূফী সাধনার ধারাটিকে বাংলা ভাষায় গতিশীল করেন । মধ্যযুগের এই অন্ত্যপর্বে যে কয়েকজন সাধক কবির আবির্ভাবে মরমী কবিতার জগত কথা ও সুরে বাক্সময় হয়ে ওঠেছে । তাদেরই অন্যতম 'শেখ চাঁদ' (জন্ম ১৬৫০- মৃত্যু ১৭২৫) ছিলেন এককালের সিলেটের খন্ড রাজ্য সমূহের মধ্যগণ্য ত্রিপুরা রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যবিদ। তাঁর রসুল বিজয় কাব্যটি হজরত রাসুলে পাক (সা.)-এর বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম জীবনী। শেখ চান্দ ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের উপর ‘শাহ্ দৌলা পীরপুস্তক’ বা ‘তালিবনামা’ কাব্যও লিখে গেছেন। ‘তালিবনামা’ গ্রন্থে শেখচান্দ বলেন;
‘এ সব রঙ্গের জন্ম ছেহা জন্ম হোতে
ভাঙ্গিয়া সকল রঙ্গ মিশিব ছেহাতে
আদ্যেত আছিল প্রভু শূন্যের শরীর
ছেয়া রঙ্গে নিজ অঙ্গে হইলেন্ত স্থির ।
সিলেটের কালজয়ী ইতিহাসে দেশে বিদেশে সর্বজনীন জনপ্রিয়তার লাভ করেছেন; শেখ ভানু (জন্ম ১৮৪৯ - মৃত্য ১৯১৯) শেখ ভানুর -নিশীতে যাইও ফুলবনে রে ভ্রমরা , নিশীতে যাইও ফুলবনে' গানটি পৃথিবীর অনেক ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে । এই বিখ্যাত গানটির কথা আরো দুজন কবিকে উৎসাহী করেছে বলে অনেক গবেষকদের ধারনা । তাদের দুজনেরই কিছু কথা রদবদল আছে । এ যেন এক ফুল-তিন মালী । একটি গান, তিনজন গীতিকারঃশেখ ভানু,রাধারমণ দত্ত ও জসীম উদ্দীন । শেখ ভানু মানব দেহের শেষ পরিণতি ভেবে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মনের আবেগে বললেন হায়-রে সোনার তনু - - আখের তোর এই হাল। এভাবে শেখ ভানু সংসারের অনিত্যতা প্রত্যক্ষ করে, দুনিয়ার মোহ, মায়া, লোভ প্রভৃতি ত্যাগ করে আল্লাহর পথে ফকির হয়ে পরমাত্মার সন্ধান করতে থাকেন। এ বিষয়টি শেখ ভান তাঁর নিজের ভাষায় বর্নণা দিয়ে লিখেন;
| এক রোজ বসে আছি নৌকার উপর
পানির মধ্যে দেখিলাম করিয়া নজর
হায়-রে; পানির উপর দেখিলাম করিয়া নজর ।
মুর্দা মানুষ ভাসে এক 'মাঝ দরিয়ায়'
উপরে বসিয়া কাক চক্ষু তার খায়
দেখিয়া আফসোস হইল দিলের ভিতর
কাঁন্দিয়া কইলাম তন-রে কি অইবে তোর।
কোথা রইলা মাতা পিতা ভাই বন্ধুগণ
কোথায় রইল ঘর বাড়ি অঙ্গের বসন
স্ত্রী-পুত্র ছাড়াইয়া কে ভাসাইল তরে
মাছ-মাছলী টাইন্যা খায় পানির উপরে।
|
হবিগঞ্জ জেলার ভাদিকারা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মনসুর উদ্দীন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার বাউল গান সংগ্রহ করে হারামণি ম্যাগাজিনে ১৯৪২ প্রচার করেন। শেখ ভানুর অনেকটি গান উক্ত ম্যাগাজিনে অন্তর্ভক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। তার জনপ্রিয় অন্যতম গান হচ্ছে;
(১)
আমি পাড়লাম না-রে -
আমার মনকে বুঝাইতে,
তোমরানি দেইকাছো কেউ -
কদম তলায় ফুল ফুইঠাছে
(২)
নিশিতে যাইও ফুল বনে-রে ভ্রমরা -
নিশিতে যাইয় ফুল বনে
নয় দরজা করি বন্ধ লইয় ফুলের গন্ধ
অন্তরে জপিয় বন্ধের নাম রে ভ্রমরা।
জ্বালাইয় দিলের বাত্তি
ফুল ফুটিবে নানান জাতি-হে ।
গান বা ছন্দের ভাব ও বিষয়গুলো এমন যে; সকল হৃদয় অনুধাবন করতে অক্ষম। সত্য হল বাস্তবিক পক্ষে এগুলো আধ্যাত্মিকতায় সমুজ্জল । কেবল মননশীল ও অনুভূতিশীল পাঠক বা শ্রুতাই হৃদয়াঙ্গম করতে সক্ষম। মরমীবাদের গান আত্মা ও পরম আত্মার মিলন সংক্রান্ত বিষয়ে রচিত। আশিক তার মাশুককে পাওয়ার জন্য সদায় ব্যাগ্র। তবুও তার দর্শন বা মোলাকাত সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রেমিক তার মাসুকের উদ্দেশ্যে আকুতি-মিনতি ভরা কন্ঠে আশা ব্যক্ত করে। যেমন সিলেটের আরেক প্রখ্যাত সাধক দুর্বিন শাহ (জন্ম ১৯২০- মৃত্যু ১৯৭৭) গানে বলেন;
কেমনে রহিব ঘরে বন্ধু বিনে একা
সখি প্রাণের বন্ধু এনে দেখা
ভুবন মোহন রূপের কিরণ নয়ন দুটি বাঁকা
দেখে তার বাঁকা নয়ন যায় না ঘরে থাকা।
বন্ধুয়ার ওই মোহন ছবি আমার মনে আঁকা
কুমলও যুগলও পদে রাধা নাম লিখা
না জানি কোনদেশে রইল আমার প্রাণও সখা
দুর্বিন শাহ কয় উড়ে যাইতে গায়ে নাই পাখা।
সাধক দুর্বিন শাহের লেখা ‘নমাজ আমার হইল না আদায়’ শীর্ষক গানটি কলিকাতার চলচ্চিএকার ঋত্বিক ঘটক তার 'গপ্পো' চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছেন। দুর্বিন শাহ'র অধিকাংশ গানে সুফি ও মরমিবাদ যথেষ্টভাবে ফুটে উঠলেও এসবের বাইরে ভিন্ন মেজাজের অসংখ্য গান লিখেছেন। শ্রেণী বিভাজন করলে এসব গানগুলোকে বাউল, বিচ্ছেদ, আঞ্চলিক, গণসংগীত, মালজোড়া, জারি, সারি, ভাটিয়ালি গানসহ বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। দুর্বিন শাহ'র জন্ম ছাতকের সুরমা নদীর উত্তর পারে নোয়ারাই গ্রামের তারামনি টিলায়। কালান্তরে এই স্থান দুরবীন টিলা নামে পরিচিত হয়।